খাবারের মান নিম্নমানের, যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা, হলের একাধিক বাথরুমের দরজা ভাঙ্গা, হলের পরিবেশ বসবাসের উপযোগী নয় এবং পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) বিজয় দিবস হলের প্রভোস্ট মো. শফিকুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। আগামী রবিবারের মধ্যে হল প্রভোস্ট শফিকুল ইসলাম পদত্যাগ না করলে অথবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল প্রভোস্ট পদ থেকে তাকে অব্যাহতি না দিলে কঠোর অবস্থানে যাবেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার দুপুর তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা বিজয় দিবস হলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা শফিকুল ইসলামের পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
সরেজমিনে বিজয় দিবস হল পরিদর্শন দেখা যায় শিক্ষার্থীরা প্রভোস্ট রুমের দরজায় তালা ঝুলিয়ে লিখেছেন, ‘প্রভোস্ট সফিক স্যারের পদত্যাগ ব্যতীত এই রুমের দরজা খোলা নিষেধ।’ হলে নেই পর্যাপ্ত ডাস্টবিন, ফলে হলের চারপাশ ও হলের বিভিন্ন কোনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। গেস্ট রুমকে বানানো হয়েছে রিডিং রুম, যেখানে পড়াশোনা করতে পারেন মাত্র ৮-১০জন শিক্ষার্থী।
হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, হলে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকার কারণে যত্রতত্র আবর্জনা, এসব আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফলে, হলের পরিবেশ বসবাসের উপযোগী হারিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যাগুলো হল কর্তৃপক্ষকে অনেকবার অবগত করার পরও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দেয়। স্বাভাবিকভাবে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময় পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এসকল কারণেই আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি। আগামী রবিবারের মধ্যে তিনি পদত্যাগ না করলে আমরা কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করবো।
শিক্ষার্থীরা জানান, পুরো বিজয় দিবস হলেই বিরাজ করছে ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ আর হলের ছাদে জমে রয়েছে ময়লার স্তূপ। শিক্ষার্থীরা জানান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে হলটি। এছাড়া হলের অনেক বাথরুম এবং টয়লেটেরই দরজা নেই, আর কতগুলোতে থাকলেও তা ভাঙা।
বশেমুরবিপ্রবির কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,সরকার ও ছাত্রলীগ নিয়ে বাজে মন্তব্য, কারণে অকারণে শিক্ষার্থীদের ডেকে হয়রানি ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তকোন্দল তৈরি, হলের ওয়াশরুম ও পানির সমস্যার কোন সমাধান না করা, হলে টিভি, ইনডোর গেমস কোনো কিছুরই ব্যবস্থা না করা, হলের ক্যান্টিনের কোন সমাধান না করাসহ অনেক সমস্যা রয়েছে এই হলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব ইয়াসার বলেন, হলের খাবারের মান নিম্নমানের। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের খাবারের পেছনে আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৫৪ কোটি ২ লক্ষ টাকার বাজেট। যার অধিকাংশ খরচ হয় বেতন ও ভাতাদি বাবদ সহায়তা হিসেবে। ছেলেদের হল ক্যান্টিনগুলোর সবই ইজারা দেওয়া। খাবারের পরিবেশনা জন্য ক্যান্টিন বয় ও রান্নার জন্য বাবুর্চি হল প্রশাসন দেওয়ার কথা থাকলেও হল প্রশাসন এই খরচগুলো না দেওয়ার কারণে ইজারাদাররা খাবারের দাম ও মান থেকে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে। এর ফলে খাবারের মান কমে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বিজয় দিবস হলের প্রভোস্ট মো. শফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রভোস্ট কমিটি ও উপাচার্যের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
বশেমুরবিপ্রবি হল প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি মো. রোকনুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে কিছুটা আলোচনা করেছি, আগামীকাল উপাচার্যের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান হবে।”
এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য একিউএম মাহবুব বলেন, “বিজয় দিবস হলের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। আমরা এটা নিয়ে বসবো, তারপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এসব নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখির দরকার নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে খাবারের জন্য বাজেট রাখা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা হলগুলোতে আগামীতে খাবারের জন্য বাজেট রাখব। তবে এখন সম্ভব না। আগামী ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে আমরা এনিয়ে সিদ্ধান্ত নিব।”